মূল প্রবন্ধ
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান কোন পথে
রায়হান উদ্দিন
প্রভাষক উখিয়া ডিগ্রী কলেজ, ককসবাজার।
প্রশিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমী ককসবাজার
প্রযোজক বাংলাদেশ বেতার , ককসবাজার।
Former Electronic Data Processing (EDP) staff, UNHCR. Coxbazar.
=
রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা পেশ করা যেতে পারে:-
১. রক্তক্ষয় ও ধ্বংসযজ্ঞ এড়িয়ে শান্তিপুর্ণভাবে মিয়ানমারের সাথে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
২. গণতান্তিক প্রক্রিয়ায় পুর্ব তিমুরের মতো জাতিসংঘের তত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের চাহিদা ও মাতামত যাচাই করার জন্য আরাকানে গণভোট গ্রহন করা যেতে পারে।এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কনভেনশান অনুযায়ী মুসলিম দেশগুলো যদি বিষয়টি জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে উত্থাপন করে, তাহলে বিষয়টি জাতিসংঘ উপেক্ষা করতে পারবে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে হবে।
৩. রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সীমান্ত অঞ্চলে আর্থ সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা দীক্ষায় অনগ্রসরতার কথা ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের এক পর্যালোচনা থেকে জানা যায়। তাই এ সমস্যার আশু সমাধানের লক্ষে এতদঅঞ্চলে নির্যাতন বন্ধকরে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসুচি ,নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রতি আরো অধিক গুরুত্ব দেওয়া জরুরী।
৪. জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মিয়ানমারে পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে সঠিক অবস্থা অবগত হয়ে কঠোরভাবে কুটনৈতিক চাপ সৃস্টি করে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের বিষয়টিতে জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ও . আই . সি (OIC) মুসলিম দেশগুলো গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে।
৫. রোহিঙ্গাদের ক্রমশ: স্বনির্ভরতা অর্জন করে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবব্ধভাবে পরিকল্পনা গ্রহন করে শক্তি সঞ্চয় করে অহিংস সংগামে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্ব, ও.আই. সি সহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রবাসী রোহিঙ্গাদের সংগঠিত হয়ে নিজ নিজ দেশের সরকার প্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে হবে।
৬. রোহিঙ্গাদের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দীক্ষায় পারদর্শী করে তুলতে হবে।
৭. রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দ এবং মুসলিম দেশসমুহকে সম্মিলিতভাবে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনসমুহের সমর্থন আদায়ের জন্য জোর প্রচেস্টা চালাতে হবে।
৮. রোহিঙ্গাদের তালিকা করে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে বুঝা যাবে বাংলাদেশে কত রোহিঙ্গা রয়েছে। মিয়ানমার সরকারে যদি পরিবর্তন আসে তাহলে তালিকা ধরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সুবিধা হবে। তালিকা করতে রোহিঙ্গা নেতাদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
৯. যতদিন রোহিংগারা ন্যায্য অধিকার নিয়ে স্বদেশে ফিরে যেতে না পারছে ততদিন যাতে তারা নিজেদের রুজী-রুটির সংস্থান নিজেরাই করতে পারে, সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা দিতে পারে, দেশ-বিদেশে যাতায়াত করতে পারে - তার জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন, আইডি কার্ড, ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিতে হবে।
=
বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও কক্সবাজারের অবস্থা
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে আরাকানের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়ে। এই সময়ের ইতিহাস বিদ্রোহ, হত্যা ও ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ। ফলে আরাকানের জনজীবন হয়ে পড়ে দুর্বিসহ।
এই ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আরাকানের সভাসদেরাই বিশেষভাবে জড়িত ছিল। এই অনিশ্চয়তার অবসানের লক্ষ্যে হারি নামক আরাকানের একজন সভাসদ আরাকানের রাজা থামাদাকে অপসারণ করেন এবং বার্মার রাজাকে আরাকানের সিংহাসন দখলের আমন্ত্রণ জানান।
তখন বার্মায় আলাঙ্গপায়া বংশের রাজা বোধপায়া রাজত্ব করতেন। তিনি ছিলেন একজন সামাজ্র্যবাদী রাজা। তিনি নিজেও আরাকান দখলের পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি দেখেন যে আরাকানে যেভাবে রাজনৈতিক বিশৃঙখলা চলছে তাতে ইংরেজ বা ফারসী শক্তি আরাকান দখলে উৎসাহিত হতে পারে। আর ইংরেজ বা ফরাসীরা আরাকানে প্রভাব বিস্তার করেতে পারলে বা আরাকান দখল করতে পারলে তা বার্মার জন্য মোটেই নিরাপদ হবে না। সুতরাং বর্মী রাজা সানন্দে আরাকান দখলের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ১৭৮৪ খ্রীষ্টাব্দে আরাকান জয় করে আরাকানকে বার্মার সাথে সংযুক্ত করেন। ঐ সময় আরাকানের প্রধান দুইটি জনগোস্টি ছিল রোহিংগা (মুসলমান) এবং মগ (বৌদ্ধ)।
বর্মী রাজা আরাকানকে রামরী, সানডওয়ে, মেযেঅং এবং আরাকান এই চারটি প্রদেশে বিভক্ত করেন এবং প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে বর্মী শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এই শাসনকর্তারা যে কোন বিষয়ে বা যে কোন নীতি গ্রহণের বর্মী রাজার অনুমোদন নেওয়ার জন্য বাধ্য ছিল। এই ভাবে আরাকান বার্মার অধীনস্থ হয়। কিন্তু ইহার ফলে আরাকানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কারণ বর্মী সৈন্যরা আরাকান দখল করে মুসলমান-বৌদ্ধ (রোহিংগা-মগ) নির্বিশেষে আরাকানের অধিবাসীদের উপর এমন অত্যাচার শুরু করে যে, আরাকানীদের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। আরাকানের রাজা থামাদা স্বয়ং নৌকা যোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় সপরিবারে বর্মীদের হাতে ধরা পড়েন। বর্মী সেনাপতি যত সংখ্যক সম্ভব আরাকানীকে গ্রেফতার করে, বন্দীদের দুই ভাগ করে পুরুষ বন্দীদের হত্যা করা হয় এবং মহিলা বন্দীদের বার্মায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্মী বাহিনীর দমননীতি এবং অত্যাচারের ফলে হাজার হাজার আরাকানী উদ্বাস্তু সীমান্ত পার হয়ে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এলাকায় অর্থাৎ বর্তমান কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়।
আরাকান জয়ের পরে বর্মীরাজ বোধপায়ার রাজ্য লিপ্সা বেড়ে যায়, তিনি শ্যাম রাজ্য (বর্তমান থাইল্যান্ড) দখলের চেষ্টা করেন এবং এমনকি চীন জয়ের স্বপ্নও দেখেন। তিনি এই জন্য আরাকান থেকে প্রচুর পরিমাণ লোক, অস্ত্রশস্ত্র এবং রসদ দাবী করেন। বর্মী সৈন্যরা দাবী আদায়ের জন্য আরাকানবাসীদের উপর অত্যাচার শুরু করে। আরাকানের জনগণকে একত্রিত করে মরিচের ধোঁয়া দেওয়া হয় এবং নানারূপ দৈহিক নির্যাতন করে রাজার দাবী আদায়ের চেষ্টা করা হয়। পরাজিত আরাকানী সৈন্যদের অস্ত্রশস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য প্রধান সেনানিবাসে ডেকে আনা হত এবং তারা উপস্থিত হলে তাদের ঘিরে ধরে নির্যাতন করা হত এবং এমনকি হত্যা করা হত। তাছাড়া আরাকানীদের উপর মাত্রাতিরিক্ত রাজস্ব চাপানো হত এবং শিশুদের উপরও ট্যাক্স বসান হত। কখনও কখনও যুবকদের ধরে নিয়ে রাজস্ব হিসেবে বার্মায় পাঠিয়ে দেওয়া হত। মেইকটিলা হ্রদ সংস্কারের জন্য ছয় হাজার আরাকানীকে পাঠান হয়, কিন্তু তারা কেউ ফিরে আসেনি। তাছাড়া বার্মার মিনগুণে অবস্থিত পাঁচশত ফুট উচ্চ প্যাগোডা নির্মাণকল্পে বর্মী রাজা “মন” ও “শান” দের মত আরাকানীদের জোর করে কাজে নিয়োগ করেন।
আরাকানীদের উপর বর্মীদের এবম্বিধ বহু অত্যাচারের ফলে আরাকানীরা ১৭৯১ খ্রীষ্টাব্দে তাদের প্রাক্তন রাজবংশের ওয়েমো নামক একজন বংশধরকে রাজা করে বর্মী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আরাকানীরা অনেক বর্মী সৈন্য হত্যা করলেও শেষ পর্যন্ত তারা পরাজিত হয়। বর্মী রাজা বিদ্রোহ দমন করে এবং আরাকানীদের উপর বর্মীদের অত্যাচার বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
বর্মী সৈন্যদের অত্যাচার সম্পর্কে একজন প্রত্যক্ষদর্শী আরাকানী সর্দার বলেন যে স্ত্রী, পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে প্রায় দুই লক্ষ আরাকানীকে হত্যা করা হয় এবং আরও প্রায় দুই লক্ষ আরাকানীকে দাসরূপে বার্মায় পাঠানো হয়। যারা জঙ্গলে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে তারা হয় বর্মী সেনাদের আঘাতে বা বন্য পশুর আক্রমণে নিহত হয়। লেটেন্যান্ট কর্ণেল ইরাস্কিন বলেন:
“বর্মীরা বিজিত ও নিরীহদের উপর অত্যাচারের জন্য দায়ী। আমার সন্দেহ নেই যে হাজার হাজার নর-নারী ও শিশুকে সুস্থ মস্তিষ্কে হত্যা করা হয়েছে।”
বার্মা রাজা বোধপায়ার অত্যাচার বাড়তেই থাকে এবং এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আরাকানীরা পুনরায় ১৭৯৬ খ্রীষ্টাব্দে দেশব্যাপী বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এলাকা কক্সবাজারে আশ্রয় গ্রহণকারী আরাকানের সরদারেরাও অংশ নেয়।
কিন্তু এই বিদ্রোহও ব্যর্থ হয়। আরাকানীরা অপারগ হয়ে নিজ নিজ ঘর বাড়ীতে অগ্নি সংযোগ করে এবং সীমান্ত অতিক্রম করে স্বপরিবারে কক্সবাজারে চলে আসে। এইভাবে ১৭৮৫ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত আরাকানে বর্মীদের নৃশংস অত্যাচার আরাকানীদের প্রতিরোধ, বিদ্রোহ ও ব্যর্থতার ফলে আরাকানীদের কক্সবাজারে আশ্রয় গ্রহণের এক সুদীর্ঘ এবং বৈচিত্রময় ইতিহাস রয়েছে।
আরাকানী রোহিংগা ও মগদের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার কারণগুলি নিন্মরূপঃ-
১। ভৌগোলিক দিক থেকে কক্সবাজার আরাকানের নিকটতম প্রতিবেশী; আরাকানও ছিল কক্সবাজারের নিকটতম প্রতিবেশী। কিন্তু আরাকান ছিল আরাকানীদের শত্রু বার্মা রাজার দখলে। কক্সবাজার বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এলাকাভুক্ত হওয়ায় বার্মার রাজা তা আক্রমণ করার সাহস পেতনা। ফলে কক্সবাজার ছিল আরাকানীদের জন্য নিকটতম নিরাপদ অঞ্চল।
২। একসময় কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অধিকৃত অঞ্চল ছিল বিধায় এই এলাকার সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল। কক্সবাজার এলাকার সঙ্গে আরাকানীদের পূর্ব পরিচয়ও ছিল।
৩। সমসাময়িক পরিস্থিতিতে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এলাকায় শান্তি ও শৃংখলা বিরাজ করত এবং উদ্বাস্তু আরাকানীরা এখানে নিরাপত্তা পায়।
৪। বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজস্ব ছিল যুক্তিযুক্ত এবং কোন লোক পরদিন সকালে কোন রাজ কর্মচারীর স্বেচ্ছাচারী আদেশে তার প্রাণদন্ড হবে, এই রূপ আশঙ্কা ছাড়াই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারত।
৫। আরাকানে ব্যাপক অরাজকতার ফলে ব্যাপক খাদ্যভাব দেখা দেয়, কিন্তু বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এলাকায় জীবন ধারনে কোন অনিশ্চয়তা ছিল না।
তাছাড়া একদল লোক আরকান ছেড়ে কক্সবাজারে আসার পরে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক তাদের আশ্রয় দানের সংবাদ পরবর্তী উদ্বাস্তুদের কোম্পানীর এলাকায় আশ্রয় নিতে প্রলুব্ধ করে। উদ্বাস্তু ছাড়া আরাকানের বিদ্রোহী সরদারগণও কোম্পানীর এলাকায় আসে, তারা নিরাপত্তা পাওয়ার সাথে সাথে তাদের আশ্রয় স্থল থেকে বর্মীদের আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
চট্টগ্রামে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন প্রবর্তিত হওয়ার সময় থেকে কোম্পানীর এলাকায় আরাকানীদের বসতি দেয়া কোম্পানীর একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি ছিল। কোম্পানী দেখে যে কক্সবাজার এলাকা জনবসতিহীন এবং চাষাবাদ বিহীন। এর ঐতিহাসিক কারণ এই যে, মুগল আমলে পর্তুগীজ এবং আরাকানী মগ দস্যূদের অত্যাচার এবং লুটতরাজের ফলে এই এলাকায় জনবসতি এবং চাষাবাদ সর্বদা বিঘ্নিত হত। তাই কোম্পানী প্রথম থেকেই এই এলাকাকে জনবহুল এবং চাষযোগ্য করার নীতি গ্রহণ করে। আরাকানের উদ্বাস্তুরা বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এই প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। কোম্পানী দৃশ্যতঃ উদ্বাস্তুদের সাহায্য করে মানবতার কারণে, কিন্তু তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এলাকাকে জনবহুল এবং চাষযোগ্য করে তোলা। ফলে কোম্পানীর রাজস্ব আয় বৃদ্ধি হয়।
১৭৮৫ খ্রীষ্টাব্দে আরাকানী উদ্বাস্তুদের কক্সবাজার আগমন বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী একটি সাময়িক ঘটনা রূপে গ্রহণ করে। কলকাতার সুপ্রিম কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে চট্টগ্রামস্থ কোম্পানীর কর্মকর্তারা উদ্বাস্তুদের রামু এবং তার আশেপাশে পার্বত্য এলাকায় বসতি দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু অগণিত উদ্বাস্তু এবং আশ্রয় গ্রহণকারী আসার ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। উদ্বাস্তুদের সঙ্গে আরাকানী বিদ্রোহী মগ সরদারদের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও জটিলতার করে তোলা। বিদ্রোহী মগ সরদারেরা মাঝে মাঝে আরাকান আক্রমণ করে লুঠতরাজে লিপ্ত হয়। এমনকি কখনও কখনও তারা কোম্পানীর এলাকায়ও লুঠতরাজ করত। প্রকৃতপক্ষে আরাকানী মগদের লুঠতরাজ তাদের জাতীয় চরিত্রের একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। চট্টগ্রামের কালেকটর কলকাতার গভর্ণর জেনারেলকে জানান যে নবাগত আরাকানী উদ্বাস্তুদের কোম্পানী এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের কোন ইচ্ছা নেই; ইতোপূর্বে প্রদত্ত মহেশখালীতে ভূমি চাষের সুযোগ তারা প্রত্যাখান করে নাফ নদীর নিকটস্থ পাহাড় জঙ্গলে চলে গেছে, যাতে তারা উভয় দেশে লুঠতরাজ করতে পারে।
বার্মার রাজা আরাকান দখল করার পরে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রথমে ভাল ছিল। উভয় সরকারের মধ্যে প্রথম যোগাযোগ হয় ১৭৮৬ খ্রীষ্টাব্দে। ঐ সময়ে কওতি নামক একজন আরাকানের সরদার কোম্পানীর এলাকা কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু বর্মী সরকার তাকে আশ্রয় না দেওয়ার জন্য কোম্পানীকে অনুরোধ করে। কিছু সংখ্যক বর্মী সৈন্য নাফ নদী অতিক্রম করে কওতির বিরুদ্ধে আগমন করে, স্থানীয় লোকজন ইহাতে ভীত ও শঙ্কিত হয়ে পড়ে। বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মেজর এলাকার সীমান্ত রক্ষার জন্য সৈন্যসহ প্রেরণ করেন। কিন্তু হঠাৎ কওতি বর্মী সৈন্যের গুলীতে মারা যায় এবং বর্মী সৈন্যরাও স্বদেশে ফিরে যায়। এর পরেও আরাকানের বিদ্রোহী সরদারের বর্মী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করতে থাকে।
১৭৮৪ খ্রীষ্টাব্দে বর্মীরাজ বোধপায়া কর্তৃক আরাকান অধিকারের প্রত্যক্ষ ফল হয় চট্টগ্রামের দক্ষিণ অঞ্চলে, বর্তমান কক্সবাজার জেলায় আরাকানী সরদার ও উদ্বাস্তুদের আগমন। বর্মী সরকার আরাকানী সরদারদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার সীমান্তে সৈন্য পাঠায়, এই সৈন্যরা মাঝে মাঝে সীমান্ত অতিক্রম করে কোম্পানীর এলাকায় অবস্থান নেয়। ফলে কোম্পানী ও বর্মী সরকারের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। অন্য দিকে বিপুল সংখ্যাক উদ্বাস্তুর আগমনে কোম্পানীর উপর ব্যাপক অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হয় যে, ১৭৯৮ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে আরাকানী উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছিল প্রায় চল্লিশ হাজার।
বর্মীদের অত্যাচারে আরাকানী উদ্বাস্তুরা এমন অবর্ণণীয় দুর্দশায় পতিত হয় যে, উদ্বাস্তুরা ঘোষণা করে, “আমরা আর আরাকানে ফিরে যাব না। আপনারা যদি এখানে আমাদের বধ করেন, আমরা বধ্য হতে রাজী। যদি আপনারা আমাদের বিতাড়ন করেন, আমরা বন্য পশুর বাসস্থান বিশাল পাহাড়গুলোর বন জঙ্গলের মধ্যে আশ্রয় নেব।”
সুতরাং উদ্বাস্তু সমস্যা যে প্রকট আকার ধারণ করে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কোম্পানীকেও শেষ পর্যন্ত এই বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হয়। বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৯৯ সালে আরাকানী উদ্বাস্তুদের পুর্নবাসনের জন্য হিরাম কক্সকে সুপারিনটেন্ডেন্ট নিযুক্ত করে। এর আগে হিরাম কক্স রেংগুনে কোম্পানীর রেসিডেন্ট ছিলেন, তাই তিনি বর্মী সরকার ও বর্মী জনগণের সম্পর্কে জানতেন এবং উদ্বাস্তুদের আশ্রয় গ্রহণ সম্পর্কেও তাঁর সম্যক জ্ঞান ছিল। উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে তার দায়িত্ব ছিল উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের নীতিমালা প্রণয়ন, স্থান নির্ণয় এবং স্থায়ীভাবে বসবাসকারী আরাকানীদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করা এবং এই উদ্দেশ্যে চাষাবাদের জন্য জমি বন্টন করা। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স এর এই নিয়োগের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়, যাতে উদ্বাস্তুরা এই বিষয়ে জানতে পারে।
১৭৯৯ সালে আরকাণী উদ্বাস্তুদের পুর্নবাসনের জন্য বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নিযুক্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স যে নীতিমালা প্রণয়ন করেন তা ঐতিহাসিক আর্কাইভে এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ-
“কোম্পানী উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলকে নির্দিষ্ট করেছিলেন। কিন্তু ইতোপূর্বেই জীবন ধারণের প্রয়োজনীয়তায় উদ্বাস্তুরা চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করতে শুরু করে। এই পর্যায়ে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নির্ধারণ করে পুনর্বসতি দেয়া সময় সাপেক্ষ ছিল। তাছাড়া খুব দ্রুত উদ্বাস্তুদের স্থানান্তর করাও সম্ভব ছিলনা। ক্যাপ্টেন কক্স সরকারী মতামতকে প্রধান্য দিলেন না এবং চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলেই উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন দেবার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন চট্টগ্রামের দক্ষিণ কূলে বসতি ও চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এছাড়া উদ্বাস্তুদের সমষ্টিগতভাবে পুনর্বাসন দেয়া দরকার, যেখানে তারা একে অন্যকে সাহায্য করতে পারবে এবং নিজেদের প্রাচীন আইনের মাধ্যমে শাসিত হয়ে বনভূমি আবাদ করে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হবে। ক্যাপ্টেন কক্সের মতে উদ্বাস্তুদের ব্যক্তিগতভাবে পুনর্বাসন সাময়িকভাবে লাভজনক হবে। কিন্তু এর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ উদ্বাস্তুদের জীবন হবে দরিদ্র ও ভবঘুরের মত এবং তারা বেশীদিন এই নিরাপত্তাহীন জীবন পছন্দ করবেনা। তিনি আরাকানীদের মহেশখাল বা রামু নদীর অথবা নাফ নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে পুনর্বাসনের স্থান নির্ণয় করেন। এই অঞ্চলটি পুনর্বাসনের জন্য নির্ণয় করার পেছনে ক্যাপ্টেন কক্সের কয়েকটি যুক্তি ছিল। প্রথমত আরাকানী উদ্বাস্তরা নিজেরাই এ অঞ্চল বসতি স্থাপনের জন্য পছন্দ করেছে। দ্বিতীয়ত এই অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই অনাবাদী এবং সম্ভবত যে কোন বৈধ দাবী হতে মুক্ত। সুতরাং এই এলাকায় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন হবে সহজ এবং অপেক্ষাকৃত কম ব্যয় বহুল। তৃতীয়ত দক্ষিণাঞ্চলের জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চল পরিষ্কার করা কষ্ট সাধ্য, কিন্তু এ অঞ্চল আবাদ করে কোম্পানীর রাজস্ব ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। চতুর্থত এই অঞ্চলে পূর্বে বসতি স্থাপনকারী আরাকানীগণ নবাগত উদ্বাস্তুদের বস্তগত সাহায্য করতে পারবে। সবশেষে এই অঞ্চলটি সমুদ্রের নিকটবর্তী এবং এখানে জলযান চলার তিনটি নদী প্রবাহিত।
“আরাকানী উদ্বাস্তুগণ মৎস্য শিকারে পারদর্শী। সুতরাং বাণিজ্যসহ প্রচুর মাছ সংগ্রহ করার সম্ভাবনা এখানে রয়েছে। এ ছাড়া ক্যাপ্টেন কক্সের মনোভাব ছিল যে আরাকানী উদ্বাস্তদের এই অঞ্চলে পুনর্বাসন দিলে তাদের জঙ্গী স্বভাব এবং বলিষ্ঠ স্বাস্থ্য ভভিষ্যতে মগ, বর্মী বা পার্বত্য অধিবাসীদের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার কাজ করবে। অবশ্য ক্যাপ্টেন কক্স চট্টগ্রামের এই অঞ্চলে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে দুটি অসুবিধা লক্ষ্য করেন। প্রথমতঃ এই অঞ্চলে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন দেয়া হলে কোম্পানীর প্রতি বর্মী সরকারের বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ আরাকানী বিদ্রোহী সর্দারদের আক্রমণের প্রবণাত দেখা যেতে পারে। প্রথম প্রতিবন্ধকটি সম্পর্কে কোম্পানীর কিছুই করণীয় নেই বলে ক্যাপ্টেন কক্স মনে করেন। তবে দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকটি শাসন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করে এবং যথাযথভাবে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার পক্ষে তিনি মত প্রকাশ করেন। বাঁকখালী বা রাম নদীর তীরে মাহেরকুলে তিনি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করার জন্য সুপারিশ করেন। এছাড়া ক্যাপ্টেন কক্স রামু হতে উখিয়া ঘাট ও নাফ নদী পর্যন্ত তীর হতে ত্রিশ মাইল দূরত্ব রেখে একটা রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করেন। অবশ্য ইতিপূর্বে লেফটেন্যান্ট টমাস ব্রগহামই প্রথম এই রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করেছিলেন। এই রাস্তা বার পোলং এর মধ্য দিয়ে রামু নদী পর্যন্ত প্রসারিত থাকবে। এবং সেখান হতে এই রাস্তা দক্ষিণাঞ্চলকে দুটি নির্দিষ্ট অংশে ভাগ করবে। ক্যাপ্টেন কক্স এই রাস্তার দু’পাশে উদ্বাস্তুদের বসতি দেবার সুপারিশ করেন। এই ব্যবস্থার ফলে কেন্দ্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা সম্ভব হবে, যা সামরিক ও বেসামরিক উভয় দিক হতেই গুরুত্বপূর্ণ। কক্স আরাকানী উদ্বাস্তুদের উপনিবেশের নিরাপত্তা ও উন্নতির জন্য রাস্তাটি নির্মাণের উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। এই রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব বোর্ড অব রেভিনিউ সমর্থন করে। পুনর্বাসনের কাজে ক্যাপ্টেন কক্স এর প্রথম কাজ ছিল রাস্তা নির্মাণ কাজে উদ্বাস্তুদের নিয়োগ, চাষাবাদে উৎসাহী আরাকানী রায়তদের পতিত ও জঙ্গলাকীর্ণ ভূমি পরিষ্কারের কাজে লাগানো। রামু হতে উখিয়া ঘাট পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে উদ্বাস্তুদের ব্যবহারের জন্য বোর্ড অব রেভিনিউ ঢাকার কালেক্টরকে ৩,৫০০ খানা কোদাল প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়।”
ক্যাপ্টেন কক্সের উপরিউক্ত নীতিমালা এবং সুপারিশ কোম্পানী কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করায় তিনি পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেন। প্রথমে তিনি উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নিরূপণের চেষ্টা করেন। এই জন্য তাঁকে অত্যন্ত সতর্ককতা অবলম্বন করতে হয়, কারণ এই বিষয়ে খোলা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে তারা মনে করবে তালিকা করে তাদের বর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এইরূপ ধারণা হলে উদ্বাস্তুরা সঠিক সংখা দেবে না। আবার জমিদারেরা মনে করতে পারে যে উদ্বাস্তুদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করে কোম্পানী তাদের অন্য কাজে লাগবে। জমিদারেরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এইভাবে গোপনে সংখ্যা নির্ধারণের চেষ্টা দুরুহ, তাদের সঠিক সংখ্যা পাওয়া সম্ভব নয়, তবুও এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় ও জানা যায় যে, উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ত্রিশ হাজার। পরে আর একটি বিজ্ঞপ্তি মারফত কক্স জানতে চান যে আরাকানী উদ্বাস্তুদের যারা কোম্পানীর এলাকায় বসবাস করতে চায় তারা যে দলীয় প্রধান বা পরিবারের প্রধান বা যে কোন প্রতিনিধির মারফৎ তাদের সংখ্যা এবং পছন্দনীয় পেশা কোম্পানীকে জানায়। এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ফলে এক স্থানে ১২ জন প্রতিনিধির মারফৎ ১৬৬৫ জন পুরুষ, ৭৯৫ জন মহিলা এবং ৬২৫ জন শিশু প্রথম বারের মত কোম্পানীর তালিকাভুক্ত হয় এবং তারা জানয় যে, তারা চাষাবাদের বিশেষভাবে আগ্রহী। কোম্পানী আরাকানী উদ্বাস্তুদের বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ তীরে বসতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই অঞ্চলের জমির মালিকানা নিয়ে শের মুস্তফা খান, কালী চরণ, সাদ উদ্দীন, গৌরী শঙ্কর ও শিবচাঁদ রায় নামক কয়েকজন জমিদারের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ক্যাপ্টেন কক্স তখন বোর্ড অব রেভিনিউকে অনুরোধ করে যেন তারা জমির স্বত্ব নির্ধারণ করার জন্য একটি তদন্ত কমিশণ গঠন করে। কারণ জমির স্বত্ব জমিদারদের হলে কোম্পানী সেখানে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করতে পারে না। কোম্পানী ক্যাপ্টেন কক্সকে সুপারিনটেন্ডেন্টের ক্ষমতা দিয়ে কমিশনার নিযুক্ত করে এবং ভূমির স্বত্বের জটিলতা সম্পর্কে বোর্ড অব রেভিনিউ জানায় যে, আরাকানী উদ্বাস্তুদের বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য পতিত জমির উপর কোন ব্যক্তি বর্গের প্রকৃত স্বত্ব নেই, কোম্পানীই মৌলিকভাবে এই জমির স্বত্বাধিকারী এবং এই অঞ্চলের জমি কোন জমিদার বা অন্য কারুর সঙ্গে বন্দোবস্ত করা হয়নি। অর্থাৎ যে সকল জমিদার এই জমির স্বত্ব দাবী করে তাদের সকল দাবীই ভুয়া। অতএব, কোম্পানী ঘোষণা করে যে, পতিত জমির উপর যদি কারও দাবী থাকে তারা যেন সরকার প্রতিষ্ঠিত আইন আদালতের আশ্রয় নেয়, বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমেই ভূমির অধিকার নির্ণয় করা হবে। এদিকে কক্স উদ্বাস্তুদের নিন্মরূপ হারে জমি বন্টন করে এবং ছয় মাসের রসিদ অগ্রিম দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি ৪/৫ জনের একটি উদ্বাস্তু পরিবারকে ছয় কানি জমি বন্দোবস্থ দেন এবং আশি আড়ি বা পাকা ছারি¦শ মণ খাদ্য শস্য দেন। শর্ত ছিল যে, প্রদত্ত জমি উদ্বাস্তুরা তিন বছর বিনা খাজনায় ভোগ করবে, কিন্তু তিন বছর পরে বোর্ড অব রেভিনিউ কর্তৃক নির্দিষ্ট হারে খাজনা দিতে হবে। অগ্রিম প্রদত্ত খাদ্য শষ্যের দাম উদ্বাস্তুরা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করবে।
আরাকানী উদ্বাস্তুদের মধ্যে চাষী ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী, যেমন কারিগর, দোকানী, জেলে ইত্যাদিও ছিল। তাদের পুনর্বাসন এবং জীকিার ব্যবস্থাও করা হয় এবং তাদের স্ব স্ব পেশায় নিযুক্ত করে পূর্ববর্তী শর্তে ও হারে অগ্রিম দেওয়া হয়। উদ্বাস্তুদের সঙ্গে আগত তাদের ধর্মযাজক বা ফুংগীদের জন্যও অনুরূপ ব্যবস্থা করা হয়। ক্যাপ্টেন কক্স মনে করেন যে, এই রূপ ব্যবস্থার ফলে মানবিক দায়িত্ব পালন করা হবে, দুর্বলেরা ধীরে ধীরে শ্রমজীবি হয়ে উঠবে, তাদের অলসতা দূর হবে এবং তাদের যৌথ উদ্যোগে দেশ ও জনগণের উন্নতি হবে। উদ্বাস্তুদের ব্যক্তিগত জীবনে তাদের নিজস্ব আইন ও প্রথাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তবে শর্ত দেওয়ার হয় যে, ঐ আইন ও প্রথাগুলি মানবিক হবে এবং ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ হবে। রামু থেকৈ উখিয়াঘাট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পার্শ্বে বসতির সুযোগ সুবিধার জন্য কয়েকটি আদর্শ পরিকল্পনাও নেওয়া হয়, এই পরিকল্পনা গুলি হচ্ছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পুকুর ও হাট বাজার প্রতিষ্ঠা করা। বাঁকখালী, রেজু ও নাফ নদীর তীরে জেলেদের বসতি দেওয়া হয় এবং বনভূমি ও জঙ্গল পরিষ্কার করার সুবিধার্থে উদ্বাস্তুদের ২০০ কুঠার, ১০০ কাঁটারি, ১২ টি বড় কাঁচি, ২০টি করাত, ৫৬ টি ছুঁচালু কুঠার, ১০০টি কোদাল ও ৪টি বড় শান পাথর সরবরাহ করারও ব্যবস্থা করা হয়।
আরাকানীদের সম্পূর্ণভাবে পুনর্বাসনের আগেই হিরাম কক্স ম্যালেরিয়া রোগে ১৭৯৯ খ্রীষ্টাব্দে মারা যান। কিন্তু কক্সবাজার নামটি এখনও ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স এর স্মৃতি বহন করে। কক্স আরাকানী উদ্বাস্তুদের এক বিরাট অংশকে ২১০ ২৭’ অক্ষাংশ এবং ৯৭০ ৫৯’ দ্রাঘিমাংশের মধ্যবর্তী এলাকার বাঁখখালী নদীর তীরে ভূমি বন্দোবস্ত দেন।
কক্সের মৃত্যুর পরে উদ্বাস্তুদের পুর্বাসনের দায়িত্ব নেন ঢাকার রেজিষ্ট্রার মিঃ কার। তিনিও রামু থেকে উখিয়াঘাট পর্যন্ত রাস্তার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য কোম্পানীকে বেশ ব্যয় বহন করে হয়। তাদের জন্য ঢাকা থেকে নৌকা এবং বাখরগঞ্জ থেকে চাউল সরবরাহ করা হয়। একমাত্র ১৭৯৯ সালের জুন মাসে লক্ষীপুর ও বাখরগঞ্জ থেকে ১৪,৫০০ মাণ চাল আনা হয় এবং ১৮০০ সালের ৫ই জুন থেকে ১৩ই আগষ্ট পর্যন্ত রামুতে উদ্বাস্তুদের জন্য ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫০২৯ সিক্কা টাকা।
আরকানী উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে কোম্পানী এতই ব্যস্ত ছিল যে, এতে প্রশাসনিক কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ১৮০৬ সালের পূর্বে কি পরিমাণ জমির জন্য উদ্বাস্তুরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল তার হিসাব চট্টগ্রামের কালেক্টর সরকারকে দিতে ব্যর্থ হয়। পরে এই বিষয়ে আরও সমস্যার উদ্ভব হয়। উদ্বাস্তুদের চাষাবাদের জমি ছিল বালুকাময় এবং সমুদ্রের নিকটে। ফলে এই জমি চাষের যোগ্য ছিলনা। এই জন্য উদ্বাস্তুগণ প্রথম থেকেই জমির খাজনা দিতনা। ১৮১৭ সালে চট্টগ্রামের ম্যাজিষ্ট্রেট পিচেল জানতে পারেন যে কিছু কপট ও দুর্নীতি পরায়ন লোক এই অঞ্চলের অধিকার নেওয়ার জন্য নানা তালবাহনা করছে। পিচেল এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন এবং এলাকাকে করমুক্ত ঘোষণার জন্য সরকারের নিকট সুপারিশশ করেন। ১৮১৭ সালের ১০ই এপ্রিল তারিখে পিচেলের চেষ্টায় উদ্বাস্তুদের জন্য একটি করমুক্ত শহর গড়ার পরিকল্পনা করেন এবং এই মর্মে সনদ জারী করেন। সনদে বলা হয় যে কক্সবাজার নামের এলাকাটি সরকারী সম্পত্তি এবং ইহা প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য করমুক্ত। কোন ব্যক্তি কোন উদ্বাস্তুর নিকট থেকে রাজস্বের অজুহাতে কোন অর্থ বা দ্রব্য আদায় করতে পারবে না। এই এলাকার উপর সম্পূর্ণ দাবী ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর।
অষ্টাদশ শতকের প্রথমদিকে আরাকানী উদ্বাস্তুদের বসতির একখানি পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। এতে এলাকার নাম, উদ্বাস্তুদের গৃহের সংখ্যা , উদ্বাস্তুদের সংখ্যা দেওয়া আছে। পরিসংখ্যান আলোচনা করে দেখা যায় যে, বেশীর ভাগ উদ্বাস্তু রামু থানায় বসতি স্থাপন করে, উদ্বাস্তুদের পরবর্তী বসতির স্থান চকরিয়া থানা, অল্প সংখ্যা উদ্বাস্তু সাতকানিয়া থানায়ও পুনর্বাসিত হয়। থানাওয়ারী ভাবে উদ্বাস্তুদের গৃহের সংখ্যা এবং উদ্বাস্তুদের মোট জনসংখ্যা নিন্মরূপঃ-
থানা
গৃহের সংখ্যা মোট জনসংখ্যা
রামু
১৯৪৩ ৬৪৫৪
রামু ও চকরিয়া ২৭৮১ ৬৩৮৭
চকরিয়া ২৫৯ ৮৫৯
রামু, চকরিয়া ও সাতকানিয়া ১৯৪ ৭৫১
উদ্বাস্তুদের প্রাপ্ত জমির পরিমাণ ছিল ৫১৩ দ্রোন ১৪ গন্ডা ১ কড়া এবং উদ্বাস্তুদের নিকট থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৯৬৯৭ টাকা ৭ আনা ৫ গন্ডা ৩ কড়া এবং উদ্বাস্তুদের সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ছিল ৮৪,৯৯৭ টাকা ৩ আনা ৫ গন্ডা। এই তালিকা আরাকানী উদ্বাস্তু সামগ্রিক পরিসংখ্যান নয়, হিরাম কক্স কর্তৃক ইতিপূর্বে রামু উখিয়ায় পূনর্বাসিত উদ্বাস্তুদের সংখ্যা এখানে নেই।
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা ফিলিস্তিন, বসনিয়া, কাশ্মীর , চেচনিয়ার মতো একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাছাড়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের স্থায়ী অধিবাসী। খ্রিস্টপুর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর যাবত আরাকান একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্টিত ছিল।
ইসলাম আবির্ভাবের ৫০ বছরের (৬১০- ৬৬০) ৬৬০) মধ্যেই মুসলমানরা আরাকান এলাকায় আসতে শুরু করে। মুসলমানরা আরাকান থেকে শুরু করে চিনের ক্যান্টন বন্দর পর্যন্ত বানিজ্য উপলক্ষে জাহাজ নিয়ে যাতায়াত করতো। রুহমী (রোসাঙ্গের রাজারা) ইরানের বাদশাহর কাছে মূল্যবান উপহার পাঠাতেন। বঙ্গোপসাগরীয় উপকুল হতে দক্ষিন পূর্ব এশিয়া পর্য়ন্ত তৎকালীন সময়ের পূর্ব হতেই আরব বণিকদের যোগাযোগ থাকার প্রমাণ ইতিহাসে ভুরি ভুরি রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, ৭৮৮ খৃ: - ৮১০ খৃ: কয়েকটি বাণিজ্য জাহাজ রামব্রী দ্বীপের তীরে এক সংঘর্ষে ভেঙ্গে পড়ে। জাহাজের আরবীয় আরোহীরা তীরে এসে ভিড়লে রাজা তাঁদের উন্নত থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করে দেন। পরবর্তীতে তাঁরা স্থানীয় রমণীদের বিয়ে করে বসবাস শুরু করেন। আরো কথিত আছে, আরবীয় মুসলমানগন সমুদ্রে দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়ায় জাহাজ ভেঙ্গে যাওয়ায় ভাসতে ভাসতে কুলে ভিড়লে ‘রহম’ ‘রহম’ শব্দে স্থানীয় লোকজনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।‘রহম’শব্দটি আরবী ভাষা। যার অর্থ ‘দয়া করা’। এই ‘রহম’ শব্দটিই বিকৃত হয়ে ‘রোয়াং’ হয়েছে মনে করা হয়। এছাড়া ভৌগলিক সুলাইমান ৮৫১ খৃ: রচিত তার বিখ্যাত ‘সিলসিলাত উত তাওয়ারিখ’ গ্রন্থে বঙ্গোপসাগরের তীরে ‘রুহমী’ নামে একটি দেশের পরিচয় দিয়েছেন। যাকে আরাকানের সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করা যেতে পারে।
ককসবাজার জেলায় বসবাসকারী জনগণ নিজেদের সাধারণত আরব বংশোদ্ভুত মনে করে থাকেন। এই জনপদের ভাষায় প্রচুর আরবী, ফার্সী ও মঘী শব্দের ব্যাবহার দেখা যায়। মঘী জরীপের অনুরুপ এই এলাকার জমির পরিমাপ কানি, গন্ডা, দ্রোন ইত্যাদীতে হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অন্যন্য অঞ্চলে গৌড়ীয় পরিমাপ অনুসারে বিঘা, কাঠা, পাখী হিসেবে জমির পরিমাপ হয়ে থাকে। অনেক ডাচ পর্তুগীজ শব্দও জনগনের ভাষায় পরিলক্ষিত হয়। যেমন ম্যনুয়েল বিকৃত হয়ে ‘মনুমিয়া’ হয়েছে। ‘ফারনানডেজ’ বিকৃত হয়ে ‘পরান মিয়া’ হয়েছে। মহাকবি আলাওল তাঁর ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে রোসাঙ্গের জনগোষ্ঠীর পুর্ণাংগ বর্ননা দিয়েছেন।
“নানা দেশী নানা লোক শুনিয়া রোসাঙ্গ ভোগ আইসন্ত নৃপ ছায়াতলে।
আরবী, মিশরী, সামী, তুর্কী, হাবসী ও রুমী, কোরাসানী, উজবেগী সকলে।
লাহোরী, মুলতানী, সিন্ধী, কাশ্মীরী, দক্ষিনী, হিন্দি, কামরুপী আর বঙ্গদেশী।
বহু শেখ, সৈয়দজাদা , মোগল, পাঠান যুদ্ধা রাজপুত হিন্দু নানা জাতি।”
(পদ্মাবতী আলাউল)
বর্তমানে আরাকান দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার রাস্ট্র মিয়ানমারের অন্তর্ভুক্ত ‘রাখাইন স্টেট’নামে পরিচিত। আরাকান বাংলাদেশের দক্ষিণপুর্ব সীমান্তে বঙ্গোপসাগরের উপকুলে পাহাড় বেস্টিত একটি রাজ্য। আরাকানের বিরাট এক জনগোষ্ঠী ইসলামের অনুসারী। আরাকানীদের মধ্যে রোহিঙ্গা, কামানচি. থাম্বইক্য. জেরবাদী প্রভৃতি জনগোষ্ঠী বিদ্যমান। তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্টী হলো আরাকানের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্টী।
আরাকান রাজাদের মুসলমানি ও বৌদ্ধ নামের তালিকাসহ শাসনকালঃ-
(List of Muslim Rulers of Arakan)
ক্রমিক মুসলিম
নাম Buddist name শাসনকাল
১. সোলাইমানশাহ
/সমুনখান নরমিখলা Narameekhala ১৪৩০-১৪৩৪ খৃ:
২. আলী
খান মিনখরী
Min khaeiri ১৪৩৪-১৪৫৯খৃ:
৩. কলিমা
শাহ বচৌপিউ
Baswpya ১৪৫৯-১৪৮২খৃ:
৪ মাথু/মাউকোশাহ দাউলি
Daoulya ১৪৮২-১৪৯২ খৃ:
৫ মুহাম্মদ
শাহ বাসাউনিউ
Ba saw nyo ১৪৯২-১৪৯৩ খৃ:
৬ নুরী
শাহ রানাউনং Ran Aung ১৪৯৩-১৪৯৪ খৃ:
৭ শেখ
মাদুল্লাহ শাহ সলিংথু Saliingathu ১৪৯৪-১৫০১খৃ:
৮ ইলি
শাহ মেংরাজা Meng Raja ১৫০১-১৫২৩খৃ:
৯ ইলিয়াস
শাহ কাছাবাদী Kasabadi ১৫২৩-১৫২৫খৃ:
১০ জালাল
শাহ মিনসোয়াও
Meng Saw Oo ১৫৩১-১৫৫৩খৃ:
১১ আলী
শাহ থাতাজা
Thatasa ১৫২৫-১৫৩১
খৃ:
১২ জবৌক
শাহ মিনবিন Min bin ১৫৩১-১৫৫৩খৃ:
১৩ সিকান্দার
শাহ মেংফলৌং
Meng phalaung ১৫৭১-১৫৯৩খৃ:
১৪ সেলিম
শাহ ১ মিনরাজা গ্যি Meng Radza gyi ১৫৯৩-১৬১২খৃ:
১৫ হুসাইন
শাহ নিং খা
মৌং
Mengkha moung ১৬১২-১৬২২খৃ:
১৬ সেলিম
শাহ ২ থিরি
থু ধম্মা ThiriThu dhamma ১৬২২-১৬৩৮খৃ:
১৭ অপাঠ্য
ফারসী নাম নরপদিগ্যি Narapadigyi ১৬৩৮-১৬৪৫খৃ:
১৬৪৫-১৭৮৫ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত আরাকান রাজাদের তালিকা
ক্র: নং রাজার নাম
শাসনকাল
১. রাজা থদো
Raza Thado
১৬৪৫-১৬৫২ খৃ:
২. সান্দা থু ধম্মা Sanda thu Dhamma ১৬৫২-১৬৮৪ খৃ:
৩. থিরিথুরিয়া Thirithuriya ১৬৮৪-১৬৮৫খৃ:
৪ ওয়ারা ধম্মা রাজা Waradamma Raza ১৬৮৫-১৬৯২খৃ:
৫ মুনি থু ধম্মা Muni Thudhamma ১৬৯২-১৬৯৪খৃ:
৬ সান্দাথুরিয়া ধম্মা Sanda Thuriaya Dahamma ১৬৯৪-১৬৯৬খৃ:
৭. নওরাতাজ
Nawrahtazaw
১৬৯৬-১৬৯৬খৃ:
৮ ময়ুক পিউ
Mayokpiya
১৬৯৬-১৬৯৭খৃ:
৯ কালামন দাত Kalamandot ১৬৯৭-১৬৯৮খ:
১০ নরাধিপতি
Naradipati
১৬৯৮-১৭০০খৃ:
১১ সান্দা উইমালা Sandawimala ১৭০০-১৭০৬খৃ:
১২ সান্দা থুরিয়া Sanda thuriya ১৭০৬-১৭১০খৃ:
১৩ সান্দা উইজা Sanda wizaya ১৭১০-১৭৩১খৃ:
১৪ সান্দা থুরিয়া Sanda thuriya ১৭৩১-১৭৩৪খৃ:
১৫ নরধিপতি
Naradipati
১৭৩৪-১৭৩৪খৃ:
১৬ নরপাওয়ারা
Narapawara
১৭৩৪-১৭৩৭খৃ:
১৭ সান্দা ইউজ্যা Sandawiziya ১৭৩৭-১৭৩৭খৃ:
১৮ খাতেয়া Khatya ১৭৩৭-১৭৩৭খৃ:
১৯ মাদারিত
Madarit
১৭৩৭-১৭৪২খৃ:
২০ নরাপায়া
Narapaya
১৭৪২-১৭৬১খৃ:
২১ থিরিথু Thirithu ১৭৬১-১৭৬১খৃ:
২২ সান্দা পায়ামা Sanda payama ১৭৬১-১৭৬৪খৃ:
২৩ আপায়া Apaya ১৭৬৪-১৭৭৩খৃ:
২৪ সান্দা থুমানা Sanda
Thumana ১৭৭৩-১৭৭৭খৃ:
২৫ সান্দা উইমালা Sanda Wimala ১৭৭৭-১৭৭৭খৃ:
২৬ সান্দা থাডিয়া Sanda thadiya ১৭৭৭-১৭৮২খৃ:
২৭ থামাডা Thamada ১৭৮২-১৭৮৫খৃ:
আরাকানে মুসলিম প্রধানমন্ত্রী / মন্ত্রীদের নাম ও সময়
(List
of Muslim Prime Ministers / Ministers of Arakan)
ক্র:নং নাম পদবী সময়কাল
১ আশরাফ
খান
লস্কর উজীর বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
রাজা থিরি
থুম্মার শাসন
আমলে(১৬২২-১৬৩৮)
২ বড়
ঠাকুর ঐ নরপতিগ্যির শাসনআমলে(১৬৩৮-১৬৪৫)
৩ মাগন
ঠাকুর প্রধান
মন্ত্রী থদোমিন্তার শাসনামলে
(১৬৪৫-১৬৫২)
৪ মোহাম্মদ
সোলাইমান ঐ থু
ধম্মার শাসনআমলে(১৬৫২-১৬৮৪)
৫ সৈয়দ
মুসা ঐ ঐ
৬ নবরাজ
মজলিশ
ঐ ঐ
৭ সৈয়দ
মোহাম্মদ খান সৈন্য
মন্ত্রী ঐ
মুসলমান কবি ও কাব্য গ্রন্থের নাম:-
(List
of Muslim Poets and Lyricists of Arakan)
ক্র:নং কবির নাম কাব্য /পুথি
১ কবি
দৈালত কাজী সতমিয়না
লোর চন্দ্রনী(অসমাপ্ত)
২. কবি
কোরেশী মাগন
ঠাকুর চন্দ্রাবতী
কাব্য
৩. মহাকবি
আলাওল পদ্মাবতী
কাব্য, সয়ফুল
মুলক বদিউজ্জামান,
হপ্ত পয়কার,
সেকান্দর
নামা , তোহফা
বা তত্তোপদেশ,
দৌলতকাজীর
অসমাপ্ত সতীময়না
লোর চন্দ্রানী
ও
রাগতালনামা প্রভৃতি।
৪. কবি
মরদন নসিব নামা
৫. কবি
আবদুল করিম
খোন্দকার দুল্লা
মজলিশ, তমিম
আনসারী ও
হাজার মাসায়েল।
৬. কবি
আবদুল করিম রোসাঙ্গ
পাঞ্চালী
৭ কবি
আবুল হোসেন আদমের
লড়াই
৮. কাজী
আবদুল করিম রাহাতুল
কুলুব, আবদুল্লাহর
হাজার সাওয়াল,
নুরনামা,
মধমালতি , দরীগে
মজলিশ।
৯. ইসমাঈল
সাকেব বিলকিসনামা।
১০. কাজী মোহাম্মদ
হোসেন আমীর
হামজা, দেওলাল
মতি, হায়দর
জঙ্গ।
১১. নসরুল্লাহ
খান জঙ্গনামা, মুসার
সোয়ার, শরীয়তনামা,
হিদায়িতুল ইসলাম।