Tuesday, August 30, 2011

30-08-2011 ওরা ফিরে আসেনি : ইন্টারন্যাশনাল ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স ডে আজ

The Daily Amardesh, 30 Aug.2011. Page-1

ওরা আর ফিরে আসেনি। এখনও পথ চেয়ে আছেন স্বজনরা, কিন্তু তাদের খোঁজ নেই। স্থান ও সময় পৃথক হলেও প্রত্যেকের ঘটনার বিবরণ একই। সাদা পোশাকধারীদের হাতে আটক, এরপর নিখোঁজ-গুম। ধরে নেয়ার সময় নিজেদের কখনও র্যাব, কখনও গোয়েন্দা পুলিশ আবার কখনও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সিভিল টিমের সদস্য পরিচয় দিলেও আটকের পর আর তাদের খোঁজ মেলে না। কোনো সংস্থা এর দায়দায়িত্ব স্বীকার করে না। কী অপরাধে আটক করা হলো এবং কেনই বা তাদের গুম করা হলো এর কোনো জবাব পাওয়া যায় না। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন, আদালতে রিট, র্যাব গোয়েন্দা কার্যালয়ে খোঁজ এবং থানা পুলিশের কাছে ধরনা দিতে দিতে তারা এখন ক্লান্ত, হতাশাগ্রস্ত এবং মর্মাহত। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।


অব্যাহতভাবে চলতে থাকা গুম-হত্যার মধ্য দিয়ে আজ ৩০ আগস্ট পালিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স ডে। এই দিবস সম্পর্কে অনুপ্রাণিত হয়েছিল লাতিন আমেরিকার ফেডারেশন অব অ্যাসোসিয়েশন ফর রিলেটিভস অব ডেটেইনেড ডিসঅ্যাপিয়ারড সংগঠন, যা একটি বেসরকারি সংস্থা। এই সংগঠনটি গোপন গ্রেফতার ও গুমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৯৮১ সালে কোস্টারিকায় স্থাপিত হয়েছিল। তখন লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে প্রতিনিয়তই গোপনে গ্রেফতার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গুম করা হতো।


মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান জানান, দেশে গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়েই চলছে। বিগত ২০১০ ও ১১ সালে সাদা পোশাকধারীদের হাতে আটক হওয়ার ঘটনায় অপরাধের এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। গত বছর আটক হওয়ার পর নিখোঁজ ১৭ ব্যক্তির স্বজনরা প্রিয়জনকে খুঁজে পায়নি। তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার ও তথ্য দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।


অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়মুক্তির জন্য নানা তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে রক্ষীবাহিনী ও স্পেশাল বাহিনী বামপন্থী লোকজনকে আটক করে নিত। তাদের কাউকে পাওয়া যেত আবার কাউকে পাওয়া যেত না। ঠিক একইভাবে বর্তমানে দেশে গুমের ঘটনা ঘটছে। এতে দেশে আইনশৃঙ্খলা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার চাচ্ছে গুমের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষর করুক। তা না হলে দেশের অবস্থা ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাবে।


আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিরাপত্তা বাহিনীর গুম-হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে। গুম-নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট এনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সের চেয়ারপার্সন মুগিয়ান্তো ও মহাসচিব ম্যারি এলিন ডি. বাকালসো জেনেভায় জাতিসংঘ দফতরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তারা বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় গুম-হত্যার ঘটনা ঘটছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গুমের শিকার জনগণ এ নিয়ে কোথাও আশ্রয় পাচ্ছে না। ভিকটিমের পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে থানা তা গ্রহণ এবং রেজিস্ট্রারভুক্ত করছে না। এটা নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হলে মানবাধিকার রক্ষা করা আবশ্যক উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, আমাদের সদস্য মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ গুম-হত্যা নিয়ে অনুসন্ধানের পর তথ্য প্রকাশ করছে। এতে অধিকারকেও নিগৃহীত হতে হচ্ছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট এনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সের কর্মকর্তারা বলেন, হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তারা। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা সংস্কারেরও দাবি জানান।


থামছে না গুম : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবাদ সত্ত্বেও কিছুতেই থামছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নির্যাতন ও তাদের নামে অপহরণ ঘটনা। দিনের পর দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও খোঁজ মিলছে না নিখোঁজ ব্যক্তিদের। ক্রসফায়ারের পর বর্তমানে বেশি আলোচিত হচ্ছে গুমের ঘটনা। কেউ কেউ বলছেন, র্যাবের পরিচয়ে বা সাদা পোশাকধারী লোকজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের অপহরণ করছে। মাঝে-মধ্যে র্যাব বা পুলিশ হেফাজতে দীর্ঘদিন আটক থাকার পর এদের কেউ কেউ ফিরে আসছে। ছেড়ে দেয়ার সময় হুমকি দেয়া হচ্ছে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে ক্রসফায়ার দেয়া হবে। ওইসব ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমিজমা সংক্রান্ত, ব্যবসায়িক লেনদেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং র্যাব-পুলিশ সোর্সদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারলেও আটক করে নিখোঁজ করে দেয়ার ঘটনা ঘটছে।


চৌধুরী আলম : বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম (৬৬) ১৪ মাস ধরে নিখোঁজ। তার ছেলে আবু সাইদ চৌধুরী বলেন, তিনি বেঁচে আছেন, না-কি মারা গেছেন জানি না। মারা গেলেও তার লাশ কোথায়? কারা তাকে আটক করল, কোথায় নিয়ে গেল সব কিছুই অজানা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বাবাকে ধরে নেয়া হলো। অথচ কোনো সংস্থা তা স্বীকার করছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। অসুস্থ মা হাসিনা চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আবু সাইদ চৌধুরী আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, সরকারের কাছে আমরা এখন এতটুকু সান্ত্বনা চাই যে, কোথায় আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। অথবা তার লাশ কোথায় ফেলে দিয়েছে। জানতে পারলে ওই স্থানটিতে আমরা অন্তত প্রতি বছর গিয়ে একটু সান্ত্বনা পেতাম। গত বছরের ২৫ জুন রাজধানীর ইন্দিরা রোডের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে প্রাইভেটকারে ধানমন্ডি যাওয়ার সময় সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিদের হাতে আটক হন তিনি। গাড়ি থামিয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যায় বলে পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। পরিবার সূত্র জানায়, চৌধুরী আলমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে আটক করার পর আদালতে রিট করায় তাকে খুঁজে বের করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব ও পুলিশের আইজিকে নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে মামলাটি সিআইডি পুলিশ তদন্ত করলেও পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলেননি তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর শাহনুর বারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উল্টো তিনি কোনো তথ্য আছে কি-না জানতে চান বাদীর কাছে। এরই মধ্যে চৌধুরী আলমের ভাই খোরশেদ আলম মিন্টুকে দুই দফায় গ্রেফতার করে পুলিশ। একবার আটকের পর ছাড়া পেয়ে সিলেটে মাজার জিয়ারত করতে গেলে সেখানে আবার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তামানে তিনি সিলেট কারাগারে আছেন।


ব্যবসায়ী রানার পরিবারে শোকের মাতম : সদরঘাট এলাকার ব্যবসায়ী তারিক উদ্দিন আহম্মেদ রানার (৩৪) খোঁজ মেলেনি ৫ মাসেও। অপহৃতের পরিবারের সদস্যরা জানান, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা তাকে আটক করে নিয়েছে। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছে রানার পরিবার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রানার বৃদ্ধা মা আশরাফুননেসা ছেলে শোকে এখন মৃত্যু শয্যায়। বাবা আজহার উদ্দিন ১০ দিন ধরে ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। অসুস্থ বাবা আজহার উদ্দিন বলেন, আমার নিরপরাধ ছেলেকে কেন এমন করে নিখোঁজ করা হলো কিছুই জানি না। ওকে ফিরে না পেলে ওর মাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। ছেলে শোকে বাড়িতে এবার ঈদ হবে না। ঈদের আনন্দ ধূলোয় মিলে গেছে। রানার বড়ভাই জানান, তার ছোট ভাইয়ের নামে থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই। তিনি সদরঘাট ইস্ট বেঙ্গল মার্কেটের কালার প্লাস গার্মেন্টের মালিক। গত ৮ এপ্রিল সূত্রাপুরের লালকুঠি ফরাশগঞ্জ ক্লাব কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত বড়ভাই ইয়াদ আহম্মেদ দিপুর বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে সে উপস্থিত ছিল। বিকাল ৪টার দিকে কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রানা এসে দাঁড়ালে ৬/৭ জন সাদা পোশাকের অস্ত্রধারী তাকে টেনে একটি মাইক্রোবাসে তোলে। ওই সময় স্থানীয় লোকজন অজ্ঞাত অস্ত্রধারীদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের র্যাবের লোক বলে দাবি করে। পরবর্তীকালে র্যাব-১০-এর কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।


মুদি দোকানি রফিকুল : ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ৬২০, উত্তর শাহজাহানপুর থেকে সাদা পোশাকের ও পোশাকধারী র্যাব সদস্যরা মুদি দোকান কর্মচারী রফিকুল ইসলামকে (৪১) ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। নিখোঁজ রফিকুলের পরিবারের সদস্যরা মানবাধিকার সংস্থা অধিকারকে জানিয়েছে, রফিকুলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তারা র্যাব-৩, স্থানীয় থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েছেন, কিন্তু তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন বিকালে র্যাবের পোশাকধারী এবং সাদা পোশাকের ১৫/২০ জন লোক দোকান থেকে রফিকুলকে আটক করে নিয়ে যায়। কী অপরাধে তাকে আটক করা হয়েছে এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানায়নি। দিনদুপুরে রফিকুলকে আটক করে নেয়ার এ দৃশ্য আশপাশের অন্যান্য দোকানদার, পথচারী ও সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে।



বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তৌফিক : ২২ ফেব্রুয়ারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তৌফিক আহমেদ হাসান হিযবুত তাহ্রীরের পোস্টারসহ অন্য দু’জনের সঙ্গে ধরা পড়ে। এ ব্যাপারে পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় ১৩ মে সে জামিন পায়। হাসানের বাবা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ খবির উদ্দিন অভিযোগ করেন, পুলিশ ও কারারক্ষীদের সূত্রে তিনি জানতে পারেন, তার ছেলেকে জেল গেট থেকে জামিনে বের হয়ে আসার পর পরই সাদা পোশাকে র্যাব অপহরণ করেছে। এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ ও র্যাব ১০-এর ডিএডির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন খবির উদ্দিন। খবির উদ্দিন বলেন, আদালত মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। গত ১৯ জুন ৬ জন সাক্ষী দিলেও ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার মাহুমদ এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন মুখ্য মহানগর হাকিমের কাছে দাখিল করেননি। তিনি ২/১ দিন পরই আদালতে খোঁজ নিলে আজ দিব কাল দিব বলে সময়ক্ষেপণ করছেন। বিষয়াটি নিয়ে আইনজীবী সমিতির সদস্যরা উদ্বিগ্ন।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী : গত বছরের ৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানা বিএনপির সভাপতি ও করলডেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে র্যাব সদস্যরা গাজীপুর থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। গাজীপুর-জয়দেবপুর বাইপাস রোডের চৌরাস্তা এলাকা থেকে সাদা পোশাকধারী ৪/৫ জন লোক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তার গাড়ি থেকে জোর করে তাকে অন্য একটি গাড়িতে তুলে নেয়। কিন্তু তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করছে র্যাব।


গত বছরের ১৪ জুলাই গোলাম মুর্তজা (৩০) নামের একজন ছাত্র সংগঠককে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী ৬/৭ ব্যক্তি ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর থেকে হাতকড়া লাগিয়ে নিয়ে যায় বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। গোলাম মুর্তজার আত্মীয়স্বজনরা সিআইডি, র্যাব এবং ধানমন্ডি থানায় যোগাযোগ করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি।


সম্প্রতি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তিন যুবককে আটক করে নেয়ার পর দু’জনের লাশ পাওয়া যায় গাজীপুরে এবং একজনের লাশ পাওয়া যায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে


গত বছর বছরের ২৭ এপ্রিল মিজানুর রহমান সুমন নামের একজন ব্যবসায়ীকে সাদা পোশাকধারী র্যাব সদস্যরা গাইবন্ধার মহিমাগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। 


লিয়াকত : ২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর লালমাটিয়ায় বোনের বাসা থেকে সাদা পোশাকের একদল লোক আওয়ামী যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা লিয়াকত হোসেনকে তুলে নিয়ে যায়। লিয়াকতের বোন জানান, তারা এখনও ভাইয়ের সন্ধান পাননি। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে আবেদন করে এবং র্যাব ও পুলিশের কাছে ধরনা দিয়েও কিছু জানতে পারেননি। লিয়াকতের স্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করে বলেছিলেন, তার স্বামীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে। কিন্তু র্যাব, পুলিশ বা সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষই লিয়াকতকে আটক করার কথা স্বীকার করেনি। এ ব্যাপারে লিয়াকতের পরিবারের সদস্যরা আদালতে গিয়েও সরকারের কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি। এখানে উল্লেখযোগ্য, লিয়াকত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীর একজন।


এছাড়াও রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম ও তার ভাগ্নে সুজন, কাফরুলের সাখাওয়াত হোসেন দুলাল, হাতিরপুলের নির্মাণসামগ্রী ব্যবসায়ী জহির রায়হান হিরন আটক হওয়ার পর নিখোঁজ রয়েছে।

অন্যদিকে ১৭ এপ্রিল বাড্ডা কুড়িল এলাকা থেকে র্যাব পরিচয়ে অজ্ঞাত কিছু লোক ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার মিজানুর রহমান মিজান, নাজমুল হক মুরাদ ও ফোরকানকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের পেছনে তুরাগ নদীর বালুতে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিছুদিন পর ফোরকান রহস্যজনকভাবে ফিরে আসে। পরে সে র্যাবের হাতে আটক হওয়ার বর্ণনা দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর সে গ্রামের বাড়ি রাজাপুরে ফিরে গেলে সেখান থেকে আবার নিখোঁজ হয় এবং এখন পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/08/30/102624