Friday, October 29, 2010

অখণ্ড বাংলায় চার্চিলই এনেছিলেন পঞ্চাশের মন্বন্তর -মধুশ্রী মুখার্জি

"When the British first moved into Bengal, it was one of the richest
places in the world. The first British merchant warriors described it
as a paradise. That area is now Bangladesh and Calcutta -- the very
symbols of despair and hopelessness."- Prof. Noam Chomsky

http://bangla.irib.ir/index.php/2010-04-21-08-15-03/67-2010-05-05-07-20-49/21290-2010-09-14-13-59-52.html

মঙ্গলবার, 14 সেপ্টেম্বর 2010 18:2

অখণ্ড বাংলায় চার্চিলই এনেছিলেন পঞ্চাশের মন্বন্তর

১৩ সেপ্টেম্বর (রেডিও তেহরান): অখণ্ড ভারতে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে প্রায়
ত্রিশ লাখ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। সম্প্রতি
প্রকাশিত "চার্চিল'স সিক্রেট ওয়ার" নামক বইয়ে 'পঞ্চাশের মন্বন্তর' নামে
পরিচিত নজিরবিহীন এ দুর্ভিক্ষ প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন বইটির লেখক মধুশ্রী
মুখার্জি। পর্দাথবিদ মধুশ্রী মুখার্জি বইটি লেখার জন্য ইতিহাসভিত্তিক
ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তিনি বইটি লেখার জন্য চার্চিল সম্পর্কে অপ্রকাশিত
প্রচুর দলিলপত্রের সাহায্য নিয়েছেন। মধুশ্রী মুখার্জি দেখতে পেয়েছেন,
বৃটেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল সরকারের
বেশ কিছু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পদক্ষেপের কারণে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে
অখণ্ড বাংলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ মর্মান্তিকভাবে মারা গেছে।


পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ- দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতে বৃটিশ রাজের
ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্রপাত হয়। অর্থাৎ বাংলা থেকেই বৃটিশ রাজের যাত্রা
শুরু হয়। কিন্তু, ১৯৪৩ সালে নজিরবিহীন মন্বন্তরে যখন বাংলার মানুষ বেঘোরে
মরছিল চার্চিল তখন তাদের সাহায্যের জন্য হাত বাড়াননি। শুধু তাই নয়,
অন্যেরা যেন দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে না আসে সে বিষয়েও
চার্চিল ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বলে মধুশ্রী মুর্খাজি তার গবেষণায় দেখতে
পেয়েছেন। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মৃত্যুতে চার্চিল সামান্য দয়া অনুভব
করেননি বরং তিনি সে সময় মন্তব্য করেছিলেন, 'ভারতবাসীরা খরগোসের মত বাচ্চা
দেয়।' চার্চিলের ভারতবাসীদের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা ছিল। তা এ সব কর্মকাণ্ড
ও কথার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। ৫০-এর মন্বন্তর নিয়ে অনেক কিছুই লেখা
হয়েছে। তবে, সে সব লেখায় এ দুর্ভিক্ষের স্থানীয় কারণগুলোর প্রতি জোর দেয়া
হয়েছে। ভারতবর্ষে যখন 'ভারত ছাড়ো' বা 'কুইট ইন্ডিয়া' আন্দোলন জোরদার হয়ে
উঠছে তখন এ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। মধুশ্রী মুর্খাজির বইতে এই প্রথম
দুর্ভিক্ষের বিষয়ে বৃটিশ রাজের ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়। বইতে চার্চিলের
ওয়ার ক্যাবিনেটের মনোভাব ও তৎপরতার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েক জাহাজ
খাদ্যশস্য পাঠানোর মাধ্যমে চার্চিল অনায়াসে ভয়াবহ এ দুর্ভিক্ষ প্রতিহত
করতে পারতেন তা 'চার্চিল'স সিক্রেট ওয়ার' বইতে প্রমাণ করা হয়েছে। বাংলার
দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য খাদ্যশস্য পাঠানোর জন্য ভারতের দুই ভাইসরয়,
চার্চিলের ভারত বিষয়ক সচিব এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত চার্চিলকে
অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, চার্চিল তাদের সে আহবান বা অনুরোধে সাড়া
দেননি।

ভারতে কখনো দুর্ভিক্ষ ছিল না। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় সেখানে ভয়াবহ
দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। আর এর কারণ হলো- সে সময় এখান থেকে খাদ্যশস্য
বৃটেনে রপ্তানি করা হতো কিংবা খাদ্যশস্যের বদলে চাষীদেরকে নীল বা পাট
চাষে বাধ্য করা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে।
১৯৪২ সালে জাপান তৎকালীন বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) দখল করে নেয়ার পর
পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। এর ফলে বার্মা থেকে ভারতে চাল আসা বন্ধ হয়ে যায়।

শীতকালীন শস্য পাকার সময় বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত
হানে। ঝড়ের হাত থেকে যে সব শস্য বেঁচে যায় সেগুলো পরবর্তীতে মড়কের মুখে
পড়ে। এ সময় বার্মা থেকে জাপানি বাহিনী ভারতের দিকে এগিয়ে আসতে পারে -এ ভয়
পেয়ে বসে বৃটিশ রাজকে। জাপানের এ অগ্রযাত্রা থামানোর জন্য তারা সব ধরণের
পদক্ষেপ নিতে থাকে। বৃটিশ রাজ নৌকা, গরুর গাড়ি, মোটর গাড়িসহ যা পায় তাই
জব্দ করতে থাকে। সে সঙ্গে কৃষকের খামারের চাল নিয়ে বৃটিশ রাজের গুদামে
ভর্তি করা হয়। তবে, জাপানিরা শেষ পর্যন্ত আসেনি। আতংকিত ব্যবসায়ীরাও সে
সময় চাল মজুদ করতে শুরু করে। চারদিকে দুর্ভিক্ষের অশনি সংকেত দেখা দেয়।
অবশ্য, সে সময় বৃটিশ সরকার গুদাম থেকে খাদ্য বিতরণ করেছিল। তবে, তা করা
হয়েছিল ব্যবসায়ী বৃটিশ ও তাদের কর্মীদের জন্য বিশেষ করে রেলওয়ে, বন্দর
শ্রমিক ও সরকারি চাকুরেদের জন্য। কোলকাতাসহ কয়েকটি বড় শহরে নির্ধারিত
মূল্যের দোকান খোলা হয়। কিন্তু, তাতে গ্রামবাংলার মানুষের কোনো উপকার
হয়নি। তাদেরকে বিনা দ্বিধায় 'ক্ষুধা রাক্ষসের' কাছে সোপর্দ করে বৃটিশ
রাজ। এ সময় চার্চিল যদি কিছু খাদ্যশস্য ভারতে পাঠাতেন তবে খাদ্যের দাম
কমে যেত। ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো বলেছিলেন, খাদ্য আমদানি
করা হয়েছে- শুধু এ খবরটি কোনোভাবে ভারতে পৌঁছালেই তার জের ধরে
খাদ্যশস্যের দাম কমে আসতো। কিন্তু, তা করা হয়নি বরং চার্চিল ও তার ওয়ার
ক্যাবিনেট ইতালির পতন ঘটলে সেখানে খাদ্যশস্য রপ্তানির জন্য জাহাজগুলোকে
রেখে দেয়। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীর নেতাজি সুভাষ চন্দ্র
বসু সে সময় বার্মা থেকে দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলার জনগণের জন্য চাল পাঠানোর
প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু, সে খবর ভারতের কোনো পত্রিকায় প্রকাশ করতে
দেয়নি বৃটিশ সেন্সর কর্তৃপক্ষ। সে সময় কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ভারতে খাদ্য
পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু, তাও হয়নি। কারণ ভারত মহাসাগর দিয়ে যে সব
বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করতে সেগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে বৃটেনে খাদ্য
আমদানির কাজে। অথচ, বৃটেনে তখন দরকারের চেয়ে অনেক বেশি খাবার মজুদ ছিল। এ
অবস্থায় বাংলার মানুষ ঝরা বকুলের মতো মরতে থাকে। কোলকাতার রাস্তাঘাট ভরে
যায় মৃত নারী-পুরুষ-শিশুর লাশে। এতেও চেতনা হয় না চার্চিলের প্রিয়
উপদেষ্টা পদার্থবিদ ফ্রেডারিক আলেকজান্ডার লিন্ডম্যান বা লর্ড চেরওয়েলের।
তিনি অর্থনীতিবিদ ম্যালথাসের তত্ত্বে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। ভারতের
দুর্ভিক্ষকে তিনি প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে মনে করতেন। খাদ্য পাঠানো হলে
ভারতবাসী সন্তান উৎপাদনে আরো আগ্রহী হবে আর এতে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির আরো
অবনতি ঘটবে বলে তিনি মনে করতেন। আমরা জানি 'রাজা যত বলে পারিষদ বলে তার
শতগুণ।' কিন্তু এখানে বরং উল্টোটা ঘটেছে। পারিষদের চেয়ে বরং রাজার সুর
আরো চড়া হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী চার্চিল তার উপদেষ্টার চেয়েও এক ধাপ
এগিয়ে যান। তিনি ভারতের দুর্ভিক্ষের বিষয়টি যেনতেনভাবে তুলে ধরেন।
চার্চিলের ভারত বিষয়ক সচিব লিও অ্যামেরি তার এমন মন্তব্য শুনে নিজেকে আর
সামলাতে পারেননি। তিনি রাগে ফেটে পড়ে বলেছিলেন, চার্চিলের মনোভাবের সঙ্গে
হিটলারের মনোভাবের মিল রয়েছে।

চার্চিল যে বাংলার দুর্ভিক্ষ নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেননি সে কথা চেপে
রাখার চেষ্টা হয়েছে এতকাল। চার্চিলের ভক্তরা দাবি করে, ভারতের খাদ্যশস্য
পাঠানোর মতো জাহাজের তখন ঘাটতি ছিল। মধুশ্রী মুখার্জি তার বইয়ে
দেখিয়েছেন, ১৯৪৩ সালের গ্রীষ্ম ও হেমন্তে বৃটেনে জাহাজের ভিড় লেগে
গিয়েছিল। আর এ ভিড় লাগার কারণ ছিল, সে সময় যুক্তরাষ্ট্র নিজ মালবাহী
জাহাজগুলো বৃটেনের কাছে তুলে দিয়েছিল। আসলে চার্চিল, লিন্ডারমেন বা তাদের
সহযোগীরা বাংলার মানুষের জীবন বাঁচানোর সামান্য প্রয়োজন বোধ করেননি।

লন্ডনের দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা মধুশ্রীর বইয়ের সমালোচনা করার সময়ে
এ দুর্ভিক্ষকে 'হলোকাস্ট' হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, এ হলোকাস্ট সম্পর্কে
তথ্য উদ্ধারের জন্য মধুশ্রী মুখার্জি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে গবেষণা
করেছেন। তিনি বৃটিশদের যে নিষ্ঠুরতার কথা তুলে ধরেছেন তাতে শিহরিত হতে
হবে। পশ্চিম বাংলার লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী এ বই সম্পর্কে বলেছেন, তার
কিশোরীকালের এক দুঃস্বপ্নকে অতীত থেকে মধুশ্রী তুলে এনেছেন। মধুশ্রী
দেখিয়ে দিয়েছেন, সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ প্রকৃতির কারণে হয়নি বরং এ
ধরণের দুর্ভিক্ষ হয়েছে চার্চিল বা হিটলারদের কারণে।

ফ্রাংকফুটে বসবাসকারী মধুশ্রী নিজের বই সম্পর্কে বলেছেন, তার আট বছর
লেগেছে এ বই লিখতে। একেবারে শূন্য থেকে তিনি লেখার কাজে নেমেছেন। তিনি
দুর্ভিক্ষের ইতিহাস নিয়ে কিছুই জানতেন না। তাকে ঔপনিবেশিক অর্থনীতি,
দুর্ভিক্ষ ও বাংলার দুর্ভিক্ষ নিয়ে অনেক পড়াশোনা করতে হয়েছে। তিনি এ সব
পড়ার আগে জানতেন না যে, কোথা থেকে প্রশ্ন শুরু করতে হবে।#

=0=

ব্রিটেন প্রায় তিন দশক যাবত আমাদের উপকূলীয় তেল-গ্যাস ক্ষেত্র কব্জা করার
জন্য নানা জাল বিস্তার করেছে। বৃটেনকে দাওয়াত দেওয়া আর “শিয়ালের কাছে
মুরগী বরগা দেয়া” একই কথা।